Monday, 11 February 2019

পাশ্চাত্য দর্শনের স্বরুপ

পাশ্চাত্য দর্শন



জ্ঞানের আদি ও ধ্রুপদী বিষয় হিসেবে দর্শনচর্চার প্রয়োজনীয়তা এবং বর্তমান বিশ্বের প্রাসঙ্গিকতার উপলব্ধি থেকে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক অঙ্গসংগঠন ইউনেস্কো ২০০২ সালে বিশ্ব দর্শন দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়। এরপর ২০০৫ সাল থেকে প্রতিবছর নভেম্বর মাসের তৃতীয় বৃহস্পতিবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশ্ব দর্শন দিবস পালিত হয়ে আসছে। দিবস উপলক্ষে দর্শনের সারাৎসার খোঁজ করেছেন তৌফিকুল ইসলাম


প্রাচীন গ্রিসে দার্শনিক থেলিসের মাধ্যমে শুরু হয় পাশ্চাত্য দর্শনের যাত্রা। এই দর্শনের নির্যাস নিহিত আছে কিছু মতবাদের মধ্যে-

জড়বাদ
জড় বা বস্তুকে ভিত্তি করে জড়বাদ বা বস্তুবাদ গড়ে উঠে। জড়বাদ বা বস্তুবাদ হচ্ছে এমন এক তত্ত্ববিদ্যক মতবাদ, যা জড়কে বিশ্বজগতের আদি সত্তা বলে মনে করে। জড়বাদের মূলকথা এই যে, জড়-ই এ জগতের আদি উপাদান। জগতের সবকিছু জড় থেকেই উদ্ভূত। এমন কি প্রাণ, মন ইত্যাদিও এ জড় থেকে উদ্ভূত।

ভাববাদ
ভাববাদ এমন একটি দার্শনিক মতবাদ, যা ভাব বা ধারণা বা আত্মাকে একমাত্র প্রকৃত সত্তা বলে মনে করে। ভাববাদকে অধ্যাত্মবাদও বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ এ মতবাদ অনুসারে মন বা আত্মাই প্রাথমিক ও মৌলিক সত্তা।

জড়বাদ যেমন জড় থেকে সব বস্তুর উৎপত্তির কথা বলে, তেমনি ভাববাদ যাবতীয় বস্তুর সৃষ্টির মূলে মন, ধারণা, চিন্তা বা আত্মার কথা বলে। জড়, গতি, শক্তি ইত্যাদি বস্তুতান্ত্রিক কথার পরিবর্তে ভাববাদ আত্মা, চেতনা, চিন্তা, বুদ্ধি ইত্যাদির কথা বলে।

অস্তিত্ববাদ
অস্তিত্ববাদ স্বাধীনতার ওপর অধিকতর গুরুত্ব আরোপ করে। কেবল সাধারণ মতের মতো স্বাধীনতার অর্থসম্পর্কীয় ব্যাখ্যা দেওয়াই অস্তিত্ববাদের মুখ্য উদ্দেশ্য নয়, বরং স্বাধীনতার অর্থ কি? কোন অর্থে মানুষ স্বাধীন, কতটুকু স্বাধীন ইত্যাদির ব্যাখ্যা দেওয়ার মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করাই অস্তিত্ববাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। অস্তিত্ববাদের মতে, মানুষ স্বাধীনতার মধ্য দিয়েই মূল্যের মাপকাঠি তৈরি করে এবং নিজেই নিজের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে তা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে।

প্রয়োগবাদ
এ মতবাদ মনে করে, যে দর্শনের সঙ্গে জীবনের কোনো যোগ নেই এবং যে দর্শন মানুষের কোনো প্রয়োজনে আসে না, সে দর্শন সত্যিকারের দর্শন নয়, কেননা তার কোনো ব্যবহারিক মূল্য নেই। ‘বাস্তবতাই জীবন’-এ কথা বলতে গিয়ে এ মতবাদ মানুষের জীবনের ওপর এমনভাবে গুরুত্বারোপ করে যে, এ মতবাদকে জীবন দর্শনও বলা হয়। ‘মানুষের জন্যই দর্শন’-এ কথাটির ওপর এ মতবাদ গুরুত্বারোপ করে বলে একে মানবতাবাদও বলা হয়।

দেহ ও মনের সম্পর্ক
দেহ ও মনের সম্পর্ক সম্বন্ধীয় সমস্যাটি দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। সাধারণ দৃষ্টিতে দেখা যায়, মানুষের দেহ ও মন পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত এবং এদের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। দেহ ও মনের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও এ সম্পর্কের ব্যাখ্যা নিয়ে বেশ মতভেদের সৃষ্টি হয়েছে। এ মতভেদের ওপর ভিত্তি করে দর্শনের ইতিহাসে যেসব মতভেদ রয়েছে, তার মধ্যে প্রধান মতবাদগুলো হচ্ছে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াবাদ, প্রয়োজনবাদ বা উপলক্ষবাদ, সমান্তরালবাদ, পূর্ব-প্রতিষ্ঠিত শৃঙ্খলাবাদ বা ঐক্যবাদ প্রভৃতি।

ইচ্ছার স্বাধীনতা
ইচ্ছার স্বাধীনতা-সম্পর্কীয় সমস্যা দর্শনের আলোচনায় একটা গুরুত্বপূর্ণ ও চিত্তাকর্ষক স্থান দখল করে আছে। দুটি বিরোধী কর্মের মধ্যে একটি কর্মকে নির্বাচন করতে মানুষ কীভাবে স্বাধীন? মানুষের প্রত্যেকটি কর্মই কি নিয়ন্ত্রিত? মানুষ কি তার অদৃষ্টের বেড়াজালে আবদ্ধ? প্রাকৃতিক জগতের ঘটনাবলীর মতো মানুষের চিন্তা ও কর্ম নিয়ন্ত্রিত হলে মানুষের কি ইচ্ছার স্বাধীনতা থাকতে পারে? ইচ্ছার স্বাধীনতা না থাকলে মানুষকে কি তার কর্মের জন্য দায়ী করা যেতে পারে? এ ইচ্ছার স্বাধীনতা নিয়ে দর্শনের ইতিহাসে বিভিন্ন মতবাদের সৃষ্টি হয়। এ মতবাদগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অদৃষ্টবাদ, নিয়ন্ত্রণবাদ, অনিয়ন্ত্রণবাদ ও আত্মনিয়ন্ত্রণবাদ বা স্ব-নিয়ন্ত্রণবাদ।





ডায়োজেনিস
ডায়োজেনিস ছিলেন গ্রিক দার্শনিক। তিনি খ্রিস্টপূর্ব ৪১২ অব্দে জন্মগ্রহণ করেন। ডায়োজেনিস একটি পিপার মধ্যে কয়েকটি কুকুর সঙ্গে করে নিয়ে থাকতেন। তার সম্বল বলতে একটি আলখাল্লা, একটি লাঠি আর রুটি রাখার একটি থলে। কাউকে তোষামোদ কিংবা পরোয়া না করার ব্যাপারে এ মহান দার্শনিকের বেশ খ্যাতি ছিল।

মহান বীর আলেকজান্ডার এ মহান দার্শনিকের জ্ঞানের সুনাম শুনে এক দিন তার সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। পিপার মধ্যে শুয়ে থাকা ডায়াজেনিসকে দেখে তিনি নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন, আপনার জন্য আমি কী করতে পারি? ডায়োজেনিস তার দিকে তাকিয়ে সূর্যের দিকে ইশারা করে বললেন-আমি রোদ পোহাচ্ছি; আপনি সূর্যটা আড়াল করে দাঁড়িয়ে আছেন। আপাতত একটু সরে দাঁড়ালেই চলবে।

বুদ্ধিবাদ
বুদ্ধিবাদ জ্ঞানের উৎপত্তি সম্পর্কীয় এমন একটি মতবাদ, যা মনে করে বুদ্ধিই জ্ঞানের একমাত্র উৎস। বুদ্ধিবাদের ইতিহাস আলোচনা করলে দেখা যায়, গ্রিসের কুটতার্কিক পণ্ডিত সোফিস্টদের জ্ঞানের উৎস প্রত্যক্ষণের সমালোচনা করতে গিয়ে সক্রেটিস (খ্রিস্ট পূর্ব ৪৬৯-৩৯৯) ও প্লেটো (খ্রিস্ট পূর্ব ৪২৭-৩৪৭) বুদ্ধিবাদের বীজ প্রথম বপন করেন।

সক্রেটিসের মতে, প্রত্যক্ষণ নয় বরং বুদ্ধিই জ্ঞানের প্রধান উৎস। তার মতে, বুদ্ধির মাধ্যমেই আমরা সার্বিক ধারণা গঠন করি এবং সার্বিক ধারণার সাহায্যে আমরা সব জ্ঞান পেয়ে থাকি। প্লেটো তার গুরু সক্রেটিসকে অনুসরণ করে বলেন, বুদ্ধিই জ্ঞানের প্রধান উপাদান। আমাদের আত্মা বা মন যেহেতু সক্রিয়, সেহেতু বুদ্ধি হলো এ আত্মার সহজাত ক্ষমতা এবং এর মাধ্যমে আমরা জ্ঞান লাভ করে থাকি।

বিচারবাদ
জ্ঞানের ক্ষেত্রে বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতা, এ দুটি পন্থাই একতরফা। এদের মধ্যে মিলন প্রয়াসই জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্টের (১৭২৪-১৮০৪) দর্শনের মূল কথা। তার কথা হলো, জ্ঞানের জন্য বুদ্ধি এবং অভিজ্ঞতা এ দুয়েরই প্রয়োজন রয়েছে, কিন্তু এদের একটাও পরিপূর্ণ জ্ঞানের জন্য এককভাবে যথেষ্ট নয়। কান্ট তার দর্শনকে বলেছেন বিচারবাদী দর্শন। কেননা তিনি বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতার মধ্যে যা কিছু অপূর্ণতা রয়েছে তাদের বিচার-বিশ্লেষণ করে, এদের প্রত্যেকটাই যে প্রত্যেকটির পরিপূরক সেটি দেখিয়েছেন।





অভিজ্ঞতাবাদ
অভিজ্ঞতাবাদ জ্ঞানের উৎপত্তি সম্পর্কে এমন একটি মতবাদ, যা অভিজ্ঞতাকেই জ্ঞানের একমাত্র উৎস বলে মনে করে। অভিজ্ঞতাবাদের ইতিহাস আলোচনা করলে দেখা যায়, প্রাচীন গ্রিসের পরমাণুবাদীরা এবং সোফিস্টরা সর্বপ্রথম অভিজ্ঞতাবাদের কথা প্রচার করেন। সোফিস্টদের মতে, ইন্দ্রিয়-প্রত্যক্ষণই জ্ঞান লাভের একমাত্র উপায়। প্রোটাগোরাস-এর মতে, (খ্রিস্ট পূর্ব ৪৮০-৪১০) ‘মানুষই সবকিছুর পরিমাপক বা নির্ধারক।’

স্বজ্ঞাবাদ
স্বজ্ঞাবাদ জ্ঞানের উৎপত্তি সম্পর্কীয় এমন একটি মতবাদ, যা স্বজ্ঞাকে জ্ঞানের একমাত্র উৎস বলে মনে করে। স্বজ্ঞাবাদ অনুসারে অভিজ্ঞতা বা বুদ্ধি জগত ও জীবন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান দিতে পারে না। একমাত্র সজ্ঞাই জগত ও জীবন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান দিতে পারে। সজ্ঞাবাদের প্রধান সমর্থক হেনরী বার্গসোঁ (১৮৫৯-১৯৪১)। তার রচনাবলীর মধ্যে ‘টাইম অ্যান্ড ফ্রি উইল’, ‘ম্যাটার অ্যান্ড মেমরি’, ‘ইনট্রোডাকশন টু মেটাফিজিকস’, ‘ক্রিয়েটিভ ইভলিউশন’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

মরমিবাদ
মরমিবাদীরা অভিজ্ঞতা বা বুদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন না, কেননা তাদের মতে এগুলোর মাধ্যমে আসল জ্ঞান পাওয়া যায় না। তারা মনে করেন যে, একমাত্র অতিপ্রাকৃতিক বা মরমি অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই পরমসত্তা বা স্রষ্টার সন্ধান পাওয়া যায়। এই মরমিবাদের মধ্যে দার্শনিক গন্ধের পরিবর্তে ধর্মের গন্ধই বেশি গোচরীভূত হয়। মুসলিম দর্শনে সুফিদের মরমিবাদী দার্শনিক বলা হয়ে থাকে ।

Friday, 23 November 2018

ভারতীয় দর্শনের স্বরুপ

   
 ১. ভারতীয় দর্শনে দর্শন বলতে কি বোঝায় ?
 = দৃশ ধাতুর সঙ্গে অনট প্রত্যয় করে দর্শন' শব্দটি            পাওয়া যায়। দৃশ শব্দের অর্থ হলো দেখা কিন্তু              এখানে দেখা বলতে আধ্যাত্বিক প্রত্যক্ষ বা সাক্ষাৎ        অনুভব কে বুঝায় সুতরাং দর্শন শব্দের অর্থ হলো          প্রকৃত সত্য বা সাক্ষাৎ তত্ত্বের উপলব্ধি।

 ২. ভারতীয় দর্শনের বৈশিষ্ট্য গুলি কি কি ?
 = ১. ভারতীয় দর্শন হলো আধ্যাত্মিক দর্শন। মুক্তি বা            মোক্ষ ভারতীয় দর্শনের সাধারণ লক্ষ।
   ২. ভারতীয় দর্শন নীতি ও ধর্মের ওপর গুরুত্ব                     আরোপ করেছে।
   ৩. ভারতীয় দর্শন জীবন ও কর্ম ভাতের দ্বারা                     পরিচালিত।

  ৩. ভারতীয় দর্শনে মোট কয়টি সম্প্রদায় আছে ?
  = ভারতীয় দর্শনে মোট নয়টি সম্প্রদায় আছে।

  ৪. বৈদিক বা আস্তিক বা ষড় দর্শন কোনগুলি ?
  = বৈদিক সম্প্রদায় হল 6 টি। ( সাংখ্য, যোগ,                   ন‍্যায়,বৈশেষিক, মীমাংসা, বেদান্ত )

  ৫. অবৈদিক সম্প্রদায় কটি ?
  = অবৈদিক সম্প্রদায় তিনটি । ( চার্বাক, জৈন, বৌদ্ধ )